শ্যামনগর প্রতিনিধি।
মেয়াদ সর্বসাকুল্যে ২৩ দিন। যার মধ্যে রয়েছে জেলা সদরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দৌড়ঝাপ। আগুনের লেলিহান শিখায় ‘শ্রী’ হারানো ভবন সংস্কারের পাশাপাশি ছিল পরিবার-পরিজনের খোঁজখবর নেয়ার মত বিষয়ও। তদুপরি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে স্থানীয়দের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। আগুনের গন্ধ ছুটতে থাকা পোড়া ইট পাথরের মধ্যে অবস্থান সত্তে¡ও কোমল ব্যবহারে সকলকে করেছিলেন বিমোহিত। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার ভুমিকা ছিল অগ্রগন্য।
এমন নানান বিশেষনের স্পষ্ট প্রতিচ্ছ¡বি ফুটে উঠলো রোববার বিকালে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জের অফিস কক্ষে। সদ্য যোগদান করা কর্মস্থল থেকে তার বিদায়ের খবর চাউর হতেই সেখানে ভীড় জমাতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার অসংখ্য মানুষ। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌছে সংবাদকর্মীরা আবিস্কার করেন একজন পুলিশ পরিদর্শকের প্রতি সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার অনন্য নজীর।
জানা যায় গত ৩০ আগষ্ট মোঃ মেহেদী হাসানকে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের নির্দেশনা জারি করা হয়। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তাকে নুতন কর্মস্থল বরিশাল রেঞ্জে বদলী করা হয়।
খবর পেয়ে নবাগত এ পুলিশ কর্মকর্তাকে বিদায় জানাতে রোববার দুপুরের পর থেকে শ্যামনগর থানায় ভীড় জমাতে থাকে স্থানীয়রা। এসময় বিদায়ী এ পুলিশ কর্মকর্তা সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনার পাশাপাশি উত্তরসুরী পুলিশ সদস্যদের প্রতি অভিন্ন ব্যবহার বজার রাখারও আহবান জানান। এসময় সংক্ষিপ্ত পরিসরে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশের পর করমর্দনকালে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত লোকজন বিদায়ী মেহেদী হাসানকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেরতে থাকেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে প্রেসক্লাব সভাপতি প্রভাষক সামিউল মনির, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, ব্যবসায়িক সমিতির ডাঃ আবু কওছার, ফিরোজ হোসেন, ছাত্র-ছাত্রী প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ, বিলাল হোসেন, সিনিয়র সিটিজেন আবু সাইদ, প্রকৌশলী আফজালুর রহমান, সাংবাদিক জাহিদ সুমন, শিক্ষক প্রতিনিধি রনজিৎ বর্মণ,উপকূলীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম, ঠিকাদার সমিতির টুমু হাসান, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের পক্ষে সিনিয়র সাংবাদিক গাজী সালাউদ্দীন বাপ্পী বলেন, নবাগত অফিসার ইনচার্জ যেন যুদ্ধ বিধ্বস্থ জনপদকে একসুত্রে গাঁথার স্বার্থক চেষ্টা করেছিলেন। নিজের স্বল্প মেয়াদে যেভাবে সব শ্রেনী পেশার মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন তা রীতিমত দৃষ্টান্ত হতে পারে।
পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরানোর মত কঠিন কাজের পাশাপাশি আইনী প্রক্রিয়া সচল করা ছাড়াও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে তিনি পারঙ্গমতার স্বাক্ষর রেখেছেন। পরবর্তী কর্মস্থলে একই উদাহরণ সৃষ্টির আহবান জানিয়ে তিনি শ্যামনগরবাসীর পক্ষ থেকে বিদায়ী পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত ঘটনার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ যেন এলেন, দেখলেন ও জয় করলেন’।
নিজের অনুভূতিতে শেখ আফজালুর রহমান জানান জনসংযোগের মাধ্যমে তিনি স্বল্প সময়েল মধ্যে পুলিশের প্রতি মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরীতে সমর্থ হয়েছেন। সেবামুলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে থানাকে উপস্থাপনের মাধ্যমে বিদায়ী মেহেদী হাসান মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রমান করলেন তিনি যেন সাবেক পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকীর যোগ্য উত্তরসুরী।
Leave a Reply